আমাদের মনে অনেক কথাই থাকে। সেসব কথা কখনো বলতে পারি, আবার কখনো বলতে পারি না। কখনো এমন হয় যে আমরা যা অনুভব করছি, বলতে চাচ্ছি, করতে চাচ্ছি তা বলে বা করে উঠতে পারি না। আবার যে কথা কিছু মানুষের কাছে সহজেই বলতে পারি, তা অন্য অনেকের কাছে বলতে পারি না বা প্রকাশ করাটা কঠিন লাগে। কাউকে ভালো লাগলে, বন্ধুত্ব করতে চাইলে, প্রশংসা ও সাহায্য করতে ইচ্ছে হলেও অনেক সময় মুখ ফুটে বলা হয় না। মনে হয় নিজের চাওয়া প্রকাশ করলে অন্যরা কষ্ট পাবে, আমাকে খারাপ ভাববে, আমার কথা পাত্তা দিবে না, আমাকে ভয় দেখাবে বা হেয় করবে। তখন নিজের মনের কথা প্রকাশ করতে পারি না। কখনো আবার এমন হয় যে একটি কাজ আমরা করতে চাচ্ছি না, কিন্তু 'না' বলতে পারছি না। তখন 'না' বলাটা যেন অনেক কঠিন মনে হয়। এমন অবস্থায় আমাদের অনেকেরই জানতে ইচ্ছা হয় আমি কীভাবে কথা বলব, কীভাবে কথা বললে নিজেকে এবং অন্যকে কষ্ট দেওয়া হবে না আবার একই সাথে নিজের চাওয়া, অনুভূতি এবং মতামত আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রকাশ করতে পারব।
এ কারণেই এই ধাপে আমরা একটা অভিযানের মধ্য দিয়ে যাব। এ অভিযানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা অনেকগুলো ঘটনা জানব সেখানে দেখব মনের কথা প্রকাশ করা নিয়ে আমরা কী ধরনের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। এই যাত্রায় আমরা নিজেকে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে আবিষ্কার করব। এ যেন এমন অভিযান যেখানে আমরা নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করার মন্ত্র খুঁজে নিচ্ছি।
নিজের কথা যেভাবে প্রকাশ করি
শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী ছোট দলে ভাগ হয়ে যাই। আমরা কীভাবে নিজের ইচ্ছা, চাওয়া, অনুভূতি, মতামত অন্যের কাছে প্রকাশ করি তা ছোট দলে শেয়ার করি। শেয়ার করার আগে নিচের বিষয় দুটি সম্পর্কে ভেবে নেব।
ওপরের দুটি ঘটনা চিরকুটে লিখে, ছবি এঁকে, অভিনয় বা অন্য কোনো উপায়ে আমার দলে প্রকাশ করতে পারি। দুটি ক্ষেত্রেই আমি কেমন অনুভব করি তা যেন চিরকুট, ছবি, অভিনয় বা অন্য উপায়ে প্রকাশ পায়। দলের সবাই দুটি ঘটনা খুঁজে বের করলে সবাই যার যার দুটি ঘটনায় কী করতে পারি বা বলতে পারি তা শেয়ার করি।
ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেকে দেখি
নিজের এবং বন্ধুদের কথা তো জানলাম। এবার আরও কিছু পরিস্থিতিতে নিজেকে কল্পনা করে দেখি। এরপর নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেই।
পরিস্থিতি ০১: আমি দেখলাম আমার বন্ধুরা বিরতির সময়ে খেলছে। আমার মনে হলো যে আমার সাথে খেলতে চায়নি বলে আমায় ডাকেনি ওরা।
এমন পরিস্থিতিতে আমার কেমন অনুভূতি হতো?
……………………………………………………………………………………………………….
……………………………………………………………………………………………………….
এ অবস্থায় আমি কী করতাম এবং বন্ধুদের কী বলতাম?
……………………………………………………………………………………………………….
……………………………………………………………………………………………………….
আমার অন্তত একজন বন্ধুর সাথে আলোচনা করি। এমন পরিস্থিতিতে তার কেমন অনুভূতি হতো এবং সে কী করত?
……………………………………………………………………………………………………….
……………………………………………………………………………………………………….
পরিস্থিতি ০২: সারাদিন ক্লাস করে এবং স্কুলে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনে অংশ নিয়ে আমি ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরেছি। গিয়ে দেখি বাসায় অনেক মেহমান। তারা যে আসবেন তা আমি আগে থেকে জানতাম না। সেই মুহূর্তে আমার একটু বিশ্রাম নেওয়ার অবস্থা নেই। এ সময় আমার চেয়ে বয়সে বেশ ছোট দুজন শিশু এল এবং কাগজ দিয়ে কিছু খেলনা বানিয়ে দেবার বায়না ধরল।
ভ্রমন পরিস্থিতিতে আমার কেমন অনুভূতি হতো?
……………………………………………………………………………………………………….
……………………………………………………………………………………………………….
এ অবস্থায় আমি কী করতাম এবং শিশুদের কী বলতাম?
……………………………………………………………………………………………………….
……………………………………………………………………………………………………….
আমার অন্তত একজন বন্ধুর সাথে আলোচনা করি। এমন পরিস্থিতিতে তার কেমন অনুভূতি হতো এবং সে কী করত?
……………………………………………………………………………………………………….
……………………………………………………………………………………………………….
পরিস্থিতি ০৩: অনেক দিন অপেক্ষা করার পরে আমার মা পছন্দের রঙ পেন্সিলের বক্স কিনে দিয়েছে। আমি বন্ধুদের দেখাতে ক্লাসে নিয়ে আসলাম।যেই কাছের বন্ধুদের দেখানোর জন্য এগুলো ব্যাগ থেকে বের করলাম, অমনি এক বন্ধু দুটি রঙ পেন্সিল হাত থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে নিল।
এমন পরিস্থিতিতে আমার কেমন অনুভূতি হতো?
……………………………………………………………………………………………………….
……………………………………………………………………………………………………….
এ অবস্থায় আমি কী করতাম এবং বন্ধুকে কী বলতাম?
……………………………………………………………………………………………………….
……………………………………………………………………………………………………….
আমার অন্তত একজন বন্ধুর সাথে আলোচনা করি। এমন পরিস্থিতিতে তার কেমন অনুভূতি হতো এবং সে কী করত?
……………………………………………………………………………………………………….
……………………………………………………………………………………………………….
পরিস্থিতি ০৪: আমি আমার বন্ধুদের সাথে খেলছি। খেলায় খুবই টানটান উত্তেজনা অবস্থা। আরেকটু পরেই আমি জিতে যাব। এমন সময় আমার মা এসে খেলা বন্ধ করতে বলছেন। বলছেন এখুনি পড়তে বসতে। আমি যেতে না চাইলে বিরক্ত হয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে আমার কেমন অনুভুতি হতো?
……………………………………………………………………………………………………….
……………………………………………………………………………………………………….
এ অবস্থায় আমি কী করতাম এবং মাকে কী বলতাম?
……………………………………………………………………………………………………….
……………………………………………………………………………………………………….
আমার অন্তত একজন বন্ধুর সাথে আলোচনা করি। এমন পরিস্থিতিতে তার কেমন অনুভূতি হতো এবং সে কী করত?
……………………………………………………………………………………………………….
……………………………………………………………………………………………………….
পরিস্থিতি ০৫: আমি শ্রেণিকাজের অংশ হিসেবে সহপাঠীদের সাথে একটি নাটকে অংশগ্রহণ করেছি। নাটকে আমার অভিনয় নিয়ে শিক্ষক যে মতামত দিলেন, তার সাথে আমি একমত নই। আমার মনে হচ্ছে কোথাও কোনো ভুল হয়েছে বা শিক্ষক আমাকে অন্য কারও সাথে মিলিয়ে ফেলেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে আমার কেমন অনুভুতি হতো?
……………………………………………………………………………………………………….
……………………………………………………………………………………………………….
এ অবস্থায় আমি কী করতাম এবং উপরের ক্লাসের শিক্ষার্থীকে কী বলতাম?
……………………………………………………………………………………………………….
……………………………………………………………………………………………………….
আমার অন্তত একজন বন্ধুর সাথে আলোচনা করি। এমন পরিস্থিতিতে তার কেমন অনুভূতি হতো এবং সে কী করত?
……………………………………………………………………………………………………….
……………………………………………………………………………………………………….
এতক্ষণ ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা করে আমরা বুঝতে পেরেছি যে পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের অনুভূতি ও আচরণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আমরা এটাও দেখলাম যে, অন্যের সাথে যোগাযোগের সময় তার সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন, নিজেদের মনের অবস্থা, আমরা কী চাই ইত্যাদি সবকিছুই প্রভাব রাখে। কখনো কখনো আমাদের চাওয়া, অনুভূতি ও মতামত প্রকাশ করার ধরন অন্যদের সাথে মিলে যাবে। আবার অনেক সময় তা মিলবে না। তবে যেকোনো পরিস্থিতি হোক না কেন, খেয়াল রাখতে হবে কীভাবে নিজেকে প্রকাশ করলে তা আমার জন্য ভালো হবে; আবার অন্যের ক্ষতি হবে না।
অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা কীভাবে প্রকাশ করব?
নিচের গল্পগুলো পড়ি। গল্পের মাঝে যে প্রশ্নগুলো রয়েছে সেগুলো নিজে নিজে উত্তর দেই। এরপরে বন্ধুর সাথে আলোচনা করি।
গল্প ১: ব্যক্তিগত সীমানা
এবার একটু দাঁড়াই এবং আমার দুই হাত দুই দিকে মেলে দিয়ে একবার চারপাশে ঘুরি। এভাবে ঘুরতে যতটুকু জায়গা লাগল, সে জায়গাটুকুই হলো আমার ব্যক্তিগত সীমানা ঘিরে থাকা অদৃশ্য বাবল। আমার পাশের সহপাঠীকেও একইভাবে হাত ছড়িয়ে ঘুরতে বলি এবং দেখি তার ব্যক্তিগত সীমানা ঘিরে থাকা অদৃশ্য বাবলের জন্য কতটুকু জায়গা লাগে।
এই ব্যক্তিগত সীমানা ঘিরে থাকা অদৃশ্য বাবল আমাদের প্রত্যেকেরই থাকে।
আমার শরীরের চারপাশে ব্যক্তিগত সীমানা ঘিরে থাকা বাবলে কে প্রবেশ করতে পারবে এবং কে পারবে না তা নির্ধারণ করার সম্পূর্ণ অধিকার আমার। যখন কেউ ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্যের ব্যক্তিগত সীমানায় ঢুকে পড়ে, তখন এ অদৃশ্য বাবল ফুটে যায়।
আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সীমানায় প্রবেশ করার অধিকার কারোরই নেই— হোক সে ছোট, সমবয়সী বা বয়সে বড়।
তাই, কেউ যেন আমার অদৃশ্য বাবল ফুটিয়ে না দেয় সেটি খেয়াল রাখব। একই সাথে আমিও যাতে অন্য কারও সাথে এ কাজ না করি, সে ব্যপারে সর্তক থাকব।
তবে কিছু মানুষ থাকে যাদেরকে এই ব্যক্তিগত সীমানায় প্রবেশ করতে দিতে ভয় বা দ্বিধা থাকে না। যাদের সাথে আমি নিরাপদ ও স্বস্তিবোধ করি, তারা এই ব্যক্তিগত সীমানায় চলে আসলেও বাবল ফুটে যায় না। এই নিরাপদ মানুষগুলো হতে পারে আমার পরিবারের সদস্য, বন্ধু, আত্মীয়, শিক্ষক বা অন্য যেকোনো ব্যক্তি। |
অনেকেই বিভিন্ন স্পর্শ, আচরণ, বা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে আমাকে ঘিরে থাকা অদৃশ্য বাবল ফুটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে; ব্যক্তিগত সীমানায় অযাচিতভাবে চলে আসতে পারে। আমি আমার ব্যক্তিগত সীমানায় এমন কাউকে আসতে দিব না যার সাথে নিজেকে নিরাপদ মনে করি না। যার সাথে আমার অস্বস্তি লাগে বা খারাপ কিছু হওয়ার ভয় থাকে। এই অনিরাপদ মানুষগুলো হতে পারে আমার পরিবারের সদস্য, বন্ধু, আত্মীয়, বা অন্য যেকোনো ব্যক্তি। |
নিরাপদ স্পর্শ আমার ব্যক্তিগত সীমানা ঘিরে থাকা অদৃশ্য বাবল ফুটিয়ে দেয় না। নিরাপদ স্পর্শে আমার অশ্বস্তি হবে না। নিরাপদ স্পর্শ এমন হতে পারে- আমার মা আমাকে জড়িয়ে ধরল, ক্লাসে ভালো করায় আমার শিক্ষক মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, বিশ্বস্ত বন্ধুর হাত ধরে ঘুরে বেড়ালাম। একেক জনের সাথে নিরাপদ স্পর্শ একেক ধরনের হয়। আমার মা কপালে চুমু দিলেও, আমি হয়তো আমার বন্ধুকে চুমু দিতে দিব না। তবে সে একই বছর সাথে হাত ধরে ঘুরতে হয়তো আমার অস্বস্তি লাগবে না।
আমার জন্য নিরাপদ স্পর্শ কোনগুলো হতে পারে তা নিচে লিখি। আমার বন্ধুর সাথে উত্তরগুলো নিয়ে আলোচনা করি এবং আলোচনা শেষে কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে করি।
অনিরাপদ স্পর্শ একদমই ঠিক না। কারো অধিকার নেই আমাকে অনিরাপদভাবে স্পর্শ করার। অনিরাপদ স্পর্শ আমার শরীর ও মনকে কষ্ট দেয় এবং আমার ব্যক্তিগত সীমানা ঘিরে থাকা বাবল ফুটিয়ে দেয়। অনিরাপদ স্পর্শ হলো যখন কেউ আমাকে আঘাত করে বা এমনভাবে স্পর্শ করে যার জন্য আমি অস্বস্তিবোধ করি। এ কাজ যে কেউই করার চেষ্টা করতে পারে, হোক সে আমার ছোট, সমবয়সী বা বয়সে বড়। মনে রাখব, আমাকে কেউ অনিরাপদভাবে স্পর্শ করলে সে দোষ কখনোই আমার না।
আমার জন্য অনিরাপদ স্পর্শ কোনগুলো হতে পারে তা নিচে লিখি। আমার বন্ধুর সাথে উত্তরগুলো নিয়ে আলোচনা করি এবং আলোচনা শেষে কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে করি।
কিছু মানুষ থাকতে পারে যারা আমার ব্যক্তিগত সীমানা ঘিরে থাকা বাবলকে গুরুত্ব দিতে চাইবে না। যদি কেউ সে আমার খুব কাছের এবং ভালোবাসার মানুষও হতে পারে) আমাকে আঘাত করে, বা অস্বস্তিকর ভাবে স্পর্শ করে, তাকে দৃঢ়ভাবে না বলার অধিকার আমার আছে।
আমি না বলার পরেও কেউ আমার ব্যক্তিগত সীমানা ঘিরে থাকা বাবল ফুটিয়ে দিতে চেষ্টা করতে পারে। এক্ষেত্রে আমি নিরাপদ বোধ করি ও বিশ্বাস করি এমন কাউকে এ বিষয়টি জানাব। যদি সে মানুষটি আমার কথা বিশ্বাস না করে বা গুরুত্ব না দেয়, তাহলে আরেকজন বিশ্বস্ত মানুষকে খুঁজে বের করব যে আমাকে সাহায্য করতে পারবে।
যদি আমি অনিরাপদ বোধ করি বা যেকোনো বিশেষ জরুরি পরিস্থিতিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্য নিতে পারি। নিচের নম্বরগুলোতে ফোন করলে আমি সাহায্য পাব:
১) শিশু সুরক্ষা বিষয়ক নম্বর: ১০৯৮
২) জরুরি সেবা নম্বর: ৯৯৯
গল্প ২
স্থানঃ নদীর পাড়
চরিত্রঃ কিংসুক চাকমা, রাজিন রহমান ও সীমান্ত পাল ।
গল্প অনুযায়ী কোন চরিত্রের সাথে নিচের কথাগুলো মিলে তা নিয়ে চিন্তা করে হ্যাঁ/না/প্রযোজ্য নয় লিখি। আমার বন্ধুর সাথে ছকটি নিয়ে আলোচনা করি এবং আলোচনা শেষে কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে করি।
গল্প ৩
গল্প অনুযায়ী কোন চরিত্রের সাথে নিচের কথাগুলো মিলে তা নিয়ে চিন্তা করে হ্যাঁ/না/প্রযোজ্য নয় লিখি। আমার বন্ধুর সাথে ছকটি নিয়ে আলোচনা করি এবং আলোচনা শেষে কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে করি।
গল্প অনুযায়ী কোন চরিত্রের সাথে নিচের কথাগুলো মিলে তা নিয়ে চিন্তা করে হ্যাঁ/না/প্রযোজ্য নয় লিখি। আমার বন্ধুর সাথে ছকটি নিয়ে আলোচনা করি এবং আলোচনা শেষে কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে করি।
চরিত্র | নিজের প্রয়োজন ও অনুভূতি চিহ্নিত করতে পেরেছে | অন্যের প্রয়োজন ও অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল | দৃঢ়ভাবে নিজের প্রয়োজন, অনুভূতি ও মতামত প্রকাশ করতে পেরেছে |
---|---|---|---|
আমিন | |||
রাবেয়া | |||
রহমান |
নিচের প্রশ্নগুলো পড়ে উত্তর তৈরি করি। বন্ধুর সাথে প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করি এবং আলোচনা শেষে কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে করি।
প্রশ্ন | উত্তর |
---|---|
আমিনের কি নিজের মতো সময় কাটানোর সুযোগ থাকা উচিত? কেন? বা কেন ? | |
আমিনের কোন পদক্ষেপগুলো তার ব্যক্তিগত সীমানা ধরে। রাখতে সাহায্য করেছে? | |
আমিনের মতো পরিস্থিতিতে পড়লে আমি আমার পরিবারের | সদস্যদের কী বলব? |
ওপরের গল্পগুলোতে অনুভুতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের কৌশল
শ্রেণিতে শিক্ষক আমাদের দলে ভাগ করে দিয়ে ওপরের গল্পগুলোতে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের বিভিন্ন কৌশল উল্লেখ করতে বলেছিলেন। এবার সেই কাজটি আমরা নিজে অপর পৃষ্ঠার ছকে করি। কোন কৌশলটি কার্যকর আর কোনটি অকার্যকর মনে হয়েছে, তা উল্লেখ করি।
গল্প | অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের কৌশল | কার্যকর/অকার্যকর |
---|---|---|
গল্প ২: সহমর্মিতা |
১.
২.
৩.
৪. | |
গল্প ৩: নিজের পছন্দ-অপছন্দ প্রকাশ করি | ১.
২.
৩.
৪. | |
গল্প ৪ঃ আত্মমর্যাদা রক্ষায় পদক্ষেপ নিই | ১.
২.
৩.
৪. | |
গল্প ৫: সম্পর্কের যত্নে কথা বলি | ১.
২.
৩.
৪. |
অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখৰ
১। চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলি আমি যখন অন্যদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলব, তখন আমাকে আত্মবিশ্বাসী মনে হবে। মনে হবে যে আমি ভয় পাচ্ছি না, বা নিজেকে ছোট করেও দেখি না। |
২। নিজেকে শান্ত রাখি। নিজেকে শান্ত রাখতে লম্বা দম নেই। ফুলের ঘ্রাণ নেওয়ার মতো করে দম নেই এবং মোমবাতি ফুঁ দেওয়ার মতো করে দম ছাড়ি। প্রথম প্রথম কাজটি করতে অস্বস্তি লাগলেও, নিয়মিত চর্চা করলে এই কৌশল আমাকে শান্ত রাখতে সাহায্য করবে। |
৩। দৃঢ়ভাবে কথা বলি। যা বলতে চাই খুব স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে বলব, খুব আস্তে বা অনেক উঁচু স্বরেও না। আমি যদি খুব আস্তে কথা | বলি সহজে কেউ আমাকে শুনবে না এবং আত্মবিশ্বাসী মনে করবে না। আবার আমি যদি অনেক উঁচু স্বরে কথা বলি তাহলে মনে হতে পারে আমি চিৎকার করছি বা অনেক রেগে কথা বলছি |
৫। আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে এমন অঙ্গভঙ্গি নজায় রাখি আমি যদি এমনভাবে দাঁড়াই যে, আমাকে দেখলে মনে হয় আমি জড়োসড়ো হয়ে আছি বা ভয় পাচ্ছি, তখন সহজে কেউ আমার কথা গুরুত্ব দিতে চাইবে না। কথা বলার সময় যা খেয়াল রাখব :
|
৬। অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি, তার অনুভূতি ও মতামতের প্রতি প্রধাশীল থাকি যখন অপর পাশের মানুষটি কথা বলছে তখন তাকে কথা শেষ করতে দেব। তার কথার মাঝেই কথা বলব না। এই মানুষটি কী চায় বা অনুভব করে তা বোঝার চেষ্টা করব। সে বিষয়ে নিজের মতো শ্রদ্ধার সাথে প্রকাশ করব। তাকে নিয়ে দোষারোপ বা হাসাহাসি করব না। |
মনে রাখব আমি নিজের প্রয়োজন, অনুভূতি ও মতামত দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করব অন্যের অধিকার ক্ষুণ্ণ না করে, অন্যের প্রয়োজন, অনুভূতি ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে। তবে অনেকে আমার নিজেকে দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করা নিয়ে কষ্ট বা রাগ অনুভব করতে পারে। আমি যদি অন্যের অধিকার ক্ষুণ্ণ না করি এবং অন্যের প্রয়োজন, অনুভূতি ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকি, তাহলে তার কষ্ট বা রাগ অনুভূতির দায়/দোষ আমার না। এ নিয়ে আমার মন খারাপ হতে পারে; কিন্তু ওই মানুষটির অনুভূতির দায়িত্ব তার নিজের।
অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চা: আমার পরিকল্পনা
আমার দৈনন্দিন জীবনে কোন কোন পরিস্থিতিতে আরও দৃঢ়ভাবে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশ করার সুযোগ আছে? নিচের ছকে এমন ৩টি পরিস্থিতির একটি তালিকা করি। যাদের সাথে মনের কথা দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করতে হবে সে মানুষদের শনাক্ত করি। তারা হতে পারেন আমার বাবা-মা, ভাই-বোন, যেকোনো আত্মীয়, বন্ধু, শিক্ষক, ওপরের বা নিচের ক্লাসের শিক্ষার্থী; আমার এলাকার পরিচিত কোনো ব্যক্তি বা অন্য যে কেউ।
তালিকা: দৈনন্দিন জীবনে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চা | |
---|---|
কোন ব্যক্তির সাথে | কোন পরিস্থিতিতে |
এবার তালিকা অনুযায়ী ৩টি পরিস্থিতিতে কীভাবে তাদের সাথে কথা বলব তার পরিকল্পনা করি এবং নিচের ছক ব্যবহার করে লিখি। পরিকল্পনার সুবিধার্থে ০৫ নং গল্প অবলম্বনে প্রথম ছকটি করে দেওয়া হলো।
নমুনা পরিকল্পনা ছক: অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চা (গল্প ০৫ অবলম্বনে নমুনা উত্তর) | |
---|---|
কার সাথে যোগাযোগ: বাবা, মা | |
ঘটনা (যা ঘটেছে) | বাবা যখন হুট করে আমার ঘরের দরজা খুলে ঢুকে পড়ে |
অনুভূতি: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | আমি অনেক বিব্রত বোধ করি |
কারণ: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | কারণ আমার মনে হয় যে আমার যে মাঝে মাঝে একা থাকা প্রয়োজন, এটা বাবা পছন্দ করছে না বা বুঝতে পারছে না |
চাওয়া: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | আমার জন্য ভালো হয় যদি বাবা ঘরে ঢোকার আগে দরজায় টোকা দেয়। |
পরিকল্পনা ছক ০১: অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চা | |
---|---|
কার সাথে যোগাযোগ: | |
ঘটনা (যা ঘটেছে) | |
অনুভূতি: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | |
কারণ: আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি | |
চাওয়া: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) |
পরিকল্পনা ছক ০২: অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চা | |
---|---|
কার সাথে যোগাযোগ: | |
ঘটনা (যা ঘটেছে) | |
অনুভূতি: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | |
কারণ: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | |
চাওয়া: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) |
পরিকল্পনা ছক ০৩: অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চা | |
---|---|
কার সাথে যোগাযোগ: | |
ঘটনা( যা ঘটেছে) | |
অনুভূতি: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | |
কারণ: (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) | |
চাওয়া (আমি/আমার শব্দ ব্যবহার করে বলি) |
ভূমিকাভিনয়ের মাধ্যমে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশ করি
অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা কীভাবে প্রকাশ করতে হয় তার ওপর আমরা শ্রেণিতে ভূমিকাভিনয় করব। আমার কয়েকজন বন্ধুর সাথে যেকোনো একটি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করি। ওই পরিস্থিতিতে কীভাবে দৃঢ়ভাবে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশ করতে পারব সে পরিকল্পনা করি। পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজেরা মিলে ভূমিকাভিনয় করি। ভূমিকাভিনয়ের সময় অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের জন্য যে বিষয়গুলো মনে রাখতে বলা হয়েছে সেগুলোও বিবেচনায় রাখব।
পরিকল্পনা অনুযায়ী আমার নিজের জীবনে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চা করি
কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চা করব তা নিয়ে কয়েকটি পরিকল্পনা করেছি। এখন ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চার একটি রেকর্ড রাখি। সামনের এক মাস বিশ্বস্ত সম্পর্ক উন্নয়নের চর্চাসংক্রান্ত ঘটনাগুলোর বিবরণ ডায়েরি বা জার্নালে লিখে রাখি।। অপর পৃষ্ঠার ছকের মতো করে অথবা আমার যেভাবে পছন্দ সেভাবে ডায়েরি বা জার্নালে লিপিবদ্ধ করে এক মাস পর শিক্ষকের কাছে জমা দিই।
দৈনন্দিন জীবনে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশের চর্চার রেকর্ড | ||||
---|---|---|---|---|
তারিখ | কোন ব্যক্তির সাথে | কোন পরিস্থিতিতে | চর্চা করতে পেরেছি? (হাঁ/না) | চর্চা করে আমার কেমন লেগেছে? |
সেশনগুলোতে অংশগ্রহণ করে সফলভাবে অনুভূতি ও প্রয়োজনের কথা বলার উপায়গুলো বের করে আনার জন্য অভিনন্দন।
আমার অগ্রগতি, আমার অর্জন
অপর পৃষ্ঠার ছকগুলো শিক্ষক পূরণ করবেন। এর মাধ্যমে আমার অগ্রগতি সম্পর্কে শিক্ষক ধারণা দেবেন। উৎসাহ দেবেন। কীভাবে আরও ভালো করতে পারি সেই উপায় জানাবেন। শিখন কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে আমার কাজগুলোর মান অনুযায়ী নিম্নলিখিতভাবে স্টার (তারকা চিহ্ন) দিয়ে মূল্যায়ন করবেন।
খুব ভালো ★★*★ ভালো ★★ আরও ভালো করার সুযোগ আছে-
আরও দেখুন...